একটি ব্লগ সাইট তৈরী করার পর প্রধান কাজ হল তাতে কনটেন্ট পাবলিশ করা। যদি কনটেন্ট বা পোস্টগুলো ভাল মানের না হয় তবে তা সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম সারিতে স্থান পাবেনা এবং ভিজিটরও আসবেনা। আর ভিজিটর না আসলে সেই ব্লগটির কোন মূল্য থাকে না। তাই আজকের এই ব্লগে পোস্ট লেখা বা কনটেন্ট লেখার সঠিক নিয়ম বা একটি ভাল মানের কনটেন্ট এ যা যা থাকতে হবে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

ব্লগে পোস্ট বা আর্টিকেল লেখার সঠিক নিয়ম FaraziTel


কিভাবে ব্লগে পোস্ট লেখা হয়

ব্লগ পোস্টে যেন-তেন, আবোল-তাবোল, হাবি-যাবি, যা ইচ্ছা- তাই লিখে পাবলিশ করলেই হবেনা, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, সঠিক বিষয়বস্তু এবং পর্যাপ্ত তথ্য হাতে নিয়ে লেখা শুরু করতে হবে।

বিষয়ঃ প্রথমে একটি বিষয় বেছে নিতে হবে যা সম্পর্কে আপনি লিখতে চাচ্ছেন। তারপর সেই বিষয়ে জানা-অজানা সকল কিছু আয়ত্ব করতে হবে।

তথ্য সংগ্রহঃ প্রচুর লেখাপড়া করতে হবে। বাছাই করা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ব্লগে প্রকাশিত পোস্টগুলো পড়তে হবে, প্রয়োজনে ইউটিউব ভিডিও দেখতে হবে এবং তথ্য সংগ্রহ করে মাথায় সেভ করে রাখুন। কখনোই কোনভাবে অন্যের তথ্য কপি করা যাবে না। কপিরাইট ধরা পরলে আপনার ব্লগটি বন্ধ হয়ে যাবে। তাই যা লিখবেন নিজের মাথা থেকে লিখুন।

শব্দঃ পোস্টে কমপক্ষে ৫০০ শব্দ ব্যবহার করতে হবে। ১০০০-২০০০ শব্দ বিশিষ্ট পোস্ট হলে সবচেয়ে ভাল হয় (যদি ব্লগটি কবিতা, ছোটগল্প বা সংবাদ নিয়ে হয় তাহলে এই নিয়ম না মানলেও হবে)। শব্দের পরিমান বাড়াতে গিয়ে আজে-বাজে কিছু লেখা যাবেনা।

নিয়ম-নিতি মানাঃ গুগল নিতি মালার লংঘন করে এমন কিছু লেখা যাবেনা। তাই গুগলের টারমস এন্ড কন্ডিশনগুলো পড়ে নিন।

ভাষাঃ যে ভাষাই ব্লগিং করুন না কেন তা যেন সহজে বোধগম্য হয়। তাই সহজ-সরল ভাবে, ব্যকরণ মেনে লিখতে হবে। বানানে ভুল করা যাবে না। সাধু, চলিত বা আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রন করা যাবে না। তাই চলিত ভাষায় লেখা উচিৎ।


কিওয়্যার্ড রিসার্চ

ব্লগে পোস্ট লেখা শুরু করার আগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল একটি বিষয় নির্ধারন করা। আর এই বিষয়টি নিজের পছন্দের হলেও এর keyword বা শব্দগুলো হতে হবে মানুষের পছন্দ অনুযায়ী। যেহেতু ব্লগ তৈরী করা হয় মানুষের জন্য তাই তার প্রত্যেকটি কনটেন্টও মানুষের চাহিদা পূরণের জন্যই লিখতে হবে। মানুষ তার প্রয়োজনীয় তথ্য জানার জন্য সার্চ ইঞ্জিনে যে শব্দগুলো লিখে সার্চ করে থাকে মূলত সেই শব্দগুলোই হল keyword. আর এই সমস্ত কিওয়্যার্ড খুজে বের করার পদ্ধতির নাম research.কিভাবে keyword research করতে হয় তা জেনে নিতে হবে। একটি ছোট নিয়ম হল, আপনার বাছাই করা বিষয়টি লিখে গুগলে সার্চ করতে হবে। সার্চ রেজাল্টের সাথে নিচের দিকে কিছু কিওয়্যার্ড শো করবে যেগুলো দিয়ে মানুষ সর্বাধিক সার্চ করে থাকে। এগুলো কপি করে নোট প্যাডে সেভ করে রাখুন।


কিওয়্যার্ড ডেনসিটি

শুধু টাইটেলে কিওয়্যার্ড এর ব্যবহার করেই শেষ নয়। পুরো পোস্ট জুড়ে এগুলো একটি নির্দিষ্ট হারে সাজিয়ে লিখতে হবে। সম্পূর্ন পোস্টে কিওয়্যার্ড ব্যবহারের এই আনুপাতিক হারকে keyword density বলা হয়। সার্চ ইঞ্জিনের রোবট যখন ব্লগ পোস্ট রিভিউ করে তখন এই জিনিস এর উপর বেশি নজর দিয়ে থাকে এবং যোগ্যতা অনুযায়ী নাম্বারিং করে তাদের মেমোরীতে সেভ করে রাখে। পরে মানুষ সার্চ করলে রেজাল্টে ঐ পোস্টটি দেখিয়ে থাকে। সাধারনত প্রতি ১০০ শব্দে ০.৩ থেকে ১.৫ হারে কিওয়্যার্ড সাজাতে হয়। তাই আগে থেকেই কিভাবে ব্লগ পোস্টে keyword density ব্যবহার করতে হয় শিখে নিতে হবে।


টাইটেল

ব্লগে পোস্ট লেখা শুরু করার প্রথমে লিখতে হয় titel. সার্চ করার পর সার্চ রেজাল্টে পোস্টের এই টাইটেলটি দেখানো হয়।  একটি ব্লগে ভিজিটর বাড়াতে টাইটেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দর ও আকর্ষণীয় টাইটেল দেখলে মানুষ সেই আর্টিকেল পড়তে আগ্রহী হয়। তাই টাইটেল সাজাতে অতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। আপনার বিষয়ের সাথে মিল রেখে উপরের রিসার্চ করা কিওয়্যার্ড থেকে এক বা একাধিক যুক্ত করে সর্বোচ্চ ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরী করে টইটেল লিখতে হবে। টাইটেলটি পড়লে যেন পাঠক পুরো আর্টিকেলের সারমর্ম সম্পর্কে ধারনা পায়।


প্রারম্ভিকা

টাইটেল লেখা শেষ করে মূল পোস্ট লেখা শুরু করতে হবে। শুরুতেই সংক্ষিপ্ত আকারে সূচনা পত্র লেখা উচিৎ। এটি পোস্টের মাধুর্যতা বৃদ্ধি করে। সম্পূর্ণ পোস্টে যা লেখা হবে এবং পাঠক এই পোস্ট পড়ে কি কি খুজে পাবে তার একটি বিবরন এখানে অল্প কথায় লিখে দিতে হবে।


ছবি যোগ করা

ব্লগের প্রত্যেকটি পোস্টে কমপক্ষে একটি ছবি যোগ করে দেয়া প্রয়োজন। পোস্টে লেখা তথ্যগুলো পাঠককে সহজে বোঝানোর জন্য ছবি ব্যবহার করতে হয়। এক্ষেত্রে একাধিক বা আরও বেশি দরকারী ছবি যোগ করা যেতে পারে। ছবি বহুল পোস্ট ছবিবিহীন পোস্টের থেকে বেশি মর্যাদা পেয়ে থাকে। শুধু ছবি দিলেই হবেনা, ছবিকে সঠিকভাবে অপটিমাইজ করতে হবে। অপটিমাইজ বলতে ছবির নাম, টাইটেল, সাইজ ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে। এর ফলে সার্চ রেজাল্টে যে ইমেজগুলো আসে সেখানে আপনার ছবিটি স্থান পাবে এবং পাঠক সহজেই সেই ছবিতে ক্লিক করে ব্লগে প্রবেশ করতে পারবে। তাই ব্লগে ছবি অপটিমাইজ করার নিয়ম এবং কোথায় দিতে হবে সেই সমন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।


ব্লগে পোস্ট লেখার সঠিক নিয়ম

টাইটেল, সুচনা ও একটি ছবি দেয়ার পর মূল পোস্টে বিস্তারিত লিখতে হবে। এ সময়ও অনেক রকম কাজ করতে হবে।

হেডিং দেওয়া

প্রতিটি পোস্ট লেখার সময় কয়েকটি স্টেপে সাজাতে হয়। আবার প্রতি স্টেপে একটি করে টাইটেল দিতে হয় যেগুলো একটু মোটা ও বড় অক্ষরে লিখতে হয়। পোস্টের ভিতরের এই টাইটেলকে heading বলা হয়। লেখার সাইজ হিসেবে হেডিং আবার কয়েক রকম হয়। খুব বড়, বড়, মাঝারি, ছোট ইত্যাদি অক্ষরের হেডিংকে ব্লগের ভাষায় h1 থেকে h6 heading বলা হয়। ব্লগ পোস্টে হেডিং ব্যবহার এর ফলে পোস্টের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং ভিজিটর ধরে রাখা যায়। মনে রাখতে হবে, সর্বনিম্ন একটি হেডিং-এ এই পোস্টের কিওয়্যার্ড গুলো ব্যবহার করতে হবে।


লিংকিং করা

ব্লগে পোস্ট লেখার মাঝে মাঝে কিছু লিংক যুক্ত করে দিতে হবে। ভিতরে কিছু লিংক থাকলে পোস্টটিকে তথ্যপূর্ন মনে করে গুগল রাংক বাড়িয়ে দেয়। তাই পোস্টে লিংক দেয়ার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। একটি পোস্টের ভিতর যে লিংক গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে লিংকিং বলা হয়। লিংকিংকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ-

১। enterlinking:

একটি পোস্টের ভিতর একই ব্লগের একই বিষয়ের উপর প্রকাশিত অন্য পোস্টগুলোর লিংক যুক্ত করাকে enter linking বলা হয়। মানে নতুন যে পোস্টটি লিখছেন তার ভিতর আপনার এই ব্লগে আগের প্রকাশিত কিছু পোস্ট এর লিংক এনে বসাতে হবে। যে পোস্টের লিংক আনবেন তা অবশ্যই নতুন লেখা পোস্টটির বিষয়ের সাথে মিল থাকতে হবে।

২। outlinking:

একটি পোস্টের ভিতর অন্য কোন ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে একই বিষয়ের উপর লিখিত কোন তথ্যের লিংক যুক্ত করাকে outlinking বলে। মানে আপনার নতুন পোস্টের ভিতর কোন ওয়েবসাইট, ইউটিউব, সোসাল মিডিয়া বা অন্য কারো ব্লগ থেকে লিংক এনে বসাতে হবে। আবারও বলি যে লিংকই আনুন না কেন তার তথ্যগুলো নতুন পোস্টের বিষয়ের সাথে মিল রাখতে হবে।


যবনিকা

সবকিছুর শেষে কিছু সমাপ্তি বাক্য লিখে পোস্ট থেকে বিদায় নিতে হবে। যেমন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে বলা, সোসাল মিডিয়ায় জয়েন হতে বলা, ধন্যবাদ জানানো ইত্যাদি লিখে দিতে হবে।


আর্টিকেল পাবলিশ করার নিয়ম

পোস্ট লেখা শেষ, এখন পাবলিশ করতে হবে। পাবলিশ করার আগে এই পোস্টের জন্য কিছু সেটিং ঠিক করতে হবে। এজন্য পোস্টের উপরে লেখার জন্য যে অপশনগুলো দেয়া আছে তার শেষে মানে ডান পাশে একটি সেটিং আইকন থাকবে সেখানে ক্লিক করুন। এতে যে অপশনগুলো থাকবে তা নিচের নিয়মে সেট করতে হবে।

লেবেলঃ এখানে আপনার লেখা পোস্টটি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে তা লিখতে হবে। একটি অথবা দুইটি ক্যাটাগরি হবে, সাথে এই ব্লগের নামটি লিখে দেয়া যেতে পারে। লেবেল থাকলে পাঠক তার দরকারী পোস্টগুলো সহজেই খুজে নিতে পারবে। তাই লেবেল যুক্ত করা জরুরী।

Link: একটি পোস্টের জন্য একটি ভাল লিংক তৈরী করা প্রয়োজন। লিংকটি কিওয়্যার্ড দিয়ে, ছোট করে এবং পাঠকের মনে রাখার মত সহজ করে তৈরী করতে হবে। এই অপশনে অটোমেটিক তৈরী হওয়া একটি লিংক দেখতে পাবেন। তার নিচে পারমালিংকে ক্লিক করে পোস্টের সাথে মিল রেখে আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটি লিংক বানিয়ে দিন।

Search discretion: এখানে যে কথাগুলো লেখা থাকবে সাধারণত সার্চ রেজাল্টে টাইটেলের নিচে সেগুলোকেই দেখানো হবে। তাহলে বোঝাই যায় এই ডেসক্রিপশন ভিজিটর বাড়াতে অনেক বড় ভুমিকা পালন করে। তাই এখানে পুরো পোস্টের মূলভাব অল্প কথায় লিখে দিতে হবে। এতে অবশ্যই কিওয়্যার্ড ব্যবহার করতে হবে।

পরের সেটিংগুলো ডিফল্ট অবস্থায় রেখে দিতে হবে।

এবার পুরো লেখাটি একবার চেক করতে হবে। কোথাও ভুল থাকলে সার্ভিস করে দিতে হবে। তারপর উপরের ডান কোনার পাবলিশ আইকনে চাপ দিয়ে বা ক্লিক করে পোস্টটি পাবলিশ করে দিন।

আজ এই পর্যন্ত। আসলে ব্লগে পোস্ট লেখার নিয়ম বা কিভাবে ব্লগে পোস্ট লিখতে হয় তা একটি পোস্টে লেখা সম্ভব নয়। শুধু যেগুলো খুব বেশি দরকার সেগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে বললাম। আশা করি উপকার হবে। - ধন্যবাদ।

Previous Post Next Post